ঝিনাইদহে কমছে না রাসায়নিক সারের ব্যবহার

ঝিনাইদহ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ঝিনাইদহ | 2023-08-27 23:33:32

ঝিনাইদহে দিন দিন বাড়ছে রাসায়নিক সারের ব্যবহার। আর এ কারণে প্রতিনিয়ত উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। সেই সাথে বাড়ছে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। জেলায় কয়েকটি সংগঠন কৃষকদের জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে উদদ্ধু করলেও তা কাজে আসছে না। হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক স্বল্প পরিসরে চেষ্টা করছেন রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএসপি ও এমওপি সালের চাহিদা ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ মেট্টিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাড়ায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৪৫ মেট্টিক টনে, পরবর্তী অর্থবছরের চাহিদা ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৪ মেট্টিক টনে এবং চলতি অর্থবছরে সারের চাহিদার পরিমান ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৫ মেট্টিক টন।

জেলার কৃষিবিদরা মনে করেন, কৃষকের জ্ঞানের অভাব ও কৃষকদের সাথে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রতিনিয়ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ছে।

এদিকে কৃষকরা বলছেন, জৈব সার না পাওয়া আর প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকার কারণে তারা জমিতে সার প্রয়োগ করছেন।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার গোবরাপাড়া গ্রামের কৃষক কালাম হোসেন বলেন, তিনি জমিতে ধান লাগাবেন। এখন ইউরিয়া সার না দিলে ধান ভালো হবে না। জৈব সার দিয়েছেন অল্প পরিমাণ। বাড়িতে গবাদি পশু না থাকার কারণে তিনি জৈব সার তৈরি করতে পারছেন না। তাছাড়াও গ্রামের অন্য কৃষকরাও ইউরিয়া সার ব্যবহার করছেন।

পোলতাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আগে জমিতে গোবর সার বেশি দিতাম। এখন গরুর না থাকায় সার সংগ্রহ করা যায় না। যেটুকু পাওয়া যায় তা পর্যাপ্ত না। তিনি আরও বলেন, শুধু সার প্রয়োগ না জমিতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বলে কিটনাশক প্রয়োগ করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

এ ব্যাপারে কৃষিবিদ আহম্মেদ হোসেন বলেন, ১৯৯০ দশকে পরিবেশ ও কৃষিকে রক্ষার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমেও জৈব সারকে উৎসাহিত করতে প্রকল্প নেয়া হয়। ওই সময় সুদূর প্রসারি ক্ষতিকারক রাসায়নিক সারের বিরুদ্ধে বলা যায় এক প্রকার আন্দোলনই শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরেও বেসরকারি স্বোচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রায় প্রতিযোগিতা শুরু করলেও কোনো অজানা কারণে সরকারি ওই উদ্যোগ থেমে যায়।

তিনি বলেন, রাসায়নিক সারের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না। তাই এ সারের পরিমিত ব্যবহার করে জৈব সারের দিকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সেই সাথে প্রতিটি কৃষকরে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করার পরামর্শ দিতে হবে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ বলেন, জৈব সার তৈরির মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়াতে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কাজে সম্পৃক্ত করছেন। রাসায়নিক সারের সহজলভ্যতার কারণে এবং গবাদি পশুর সংকটের জন্য জৈব সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর