রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘ডোল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে ভুয়া এনজিওর মাধ্যমে অপতৎপরতার খবর ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা খোলস পাল্টেছে প্রতিষ্ঠানটি। আত্মগোপনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও শিবির নেতা সাইদুল ইসলাম ওরফে রিজভী।
জানা যায়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে সাইদের মিশন শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অর্থায়নের জন্য নিয়ে আসা মানবিক সহায়তার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বনে গেছেন কোটিপতি। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যেতে নানাভাবে উসকানি দিয়ে আসছিল ভুয়া এনজিও ‘ডোল ইন্টারন্যাশনাল।’
এ নিয়ে ‘রোহিঙ্গা শিবিরে ডোল ইন্টারন্যাশনাল নামে ভুয়া এনজিওর অপতৎপরতা’ শিরোনামে ৬ জানুয়ারী বার্তা২৪.কম একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গা ঢাকা দিয়েছে ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইদুল ইসলাম ওরফে রিজভী। কিন্তু কর্মকাণ্ড বন্ধ করেনি সে। বিভিন্ন কৌশলে গত ৮ জানুয়ারিও ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় কার্যক্রম চালিয়েছে তারা। সাইদের অবর্তমানে ডোল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৌহিদ ও তামিম নামে দুই যুবক। তারা আপন সহোদর। বর্তমানে তৌহিদ ও তামিমসহ ডোলের একটি গ্রুপ উখিয়া ও কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাইদের পরিবর্তে কাজ করা তৌহিদ তুরস্কে পড়াশোনা করেছে। তৌহিদ ও তামিমের বাবা হলেন মাওলানা শফিকুল্লাহ আল মাদানি। তিনি তামিরুল মিল্লাত টঙ্গি শাখার ভাইস-প্রিন্সিপাল ছিলেন। তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জামায়াতে ইসলামের লোকজন জড়িত।
তুরস্কে পড়াশোনার সুবাদে তুর্কিতে সে ডোল ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে অর্থ সংগ্রহে নেতৃত্ব দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনহীন বিভিন্ন এনজিও নিয়ে এসে সাইদের ডোল ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সাইদের পড়াশোনা, বেড়ে উঠা সবকিছুই রোহিঙ্গাভিত্তিক সংগঠন আরএসওর অর্থায়নে। ছোটবেলায় যে মাদ্রাসায় সাইদ পড়াশোনা করেছে সেটি চলে আরএসওর অর্থায়নে। তখন থেকেই আরএসওর সঙ্গে সখ্যতা সাইদের। এরপর সাইদ এবং তার বন্ধু মিলে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে। ওই এনজিওর হয়ে উত্তরবঙ্গে কাজ করেছিল সাইদ।
এক পর্যায়ে সাইদ ওই এনজিওর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরে সাইদ এবং তার বন্ধু মিলে চকরিয়ার সাহারবিল এলাকায় ‘দারুল হিকমাহ’ নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। পরে দুর্নীতির অভিযোগে সাইদকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর নাম স্বর্বস্ব সংস্থার অর্থায়ন এনে সাইদ ডোল ইন্টারন্যাশনালের সাইনবোর্ডে উখিয়ার মরিচ্যা স্টেশনের পরে নাপিতপাড়া এলাকায় পাহাড়ের ওপর একটি মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে ওই মাদ্রাসা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সাইদ।
গত কয়েক মাস যাবৎ রিভাত, এসকেটি, উইকেয়ার, ইলিকদারসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি এনজিওর অর্থায়ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। রিভাতের সবচেয়ে বেশি কর্মকাণ্ড চলে পাকিস্তানে। সাইদের মূল কর্মকাণ্ড রোহিঙ্গাদের ফেরত না যেতে উদ্ধুব্ধ করা এবং তাদের নিয়ে অপতৎপরতা চালানো।
কিন্তু বার্তা২৪.কমে সংবাদ প্রকাশের পর ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে সাইদ। প্রভাবশালীদের দ্বারস্থ হয়ে নিজেকে রক্ষার এ প্রতিবেদককেও ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে ‘বাংলাদেশ-আরকান’ লেখা ব্যানারসহ গেইটগুলোর সন্ধানে নেমেছে তারা। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রমাণ পেয়েছে সরকারি একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। সাইদের ব্যাংক একাউন্টের অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়েও গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে তারা। একইসঙ্গে সাইদকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডোল ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাইদুল ইসলাম ওরফে রিজভীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তুরস্কের লোকজন রোহিঙ্গাদের আরাকানের নাগরিক বলে। তাই ব্যানারে আরাকান শব্দটা ব্যবহার করেছি।
সাইদুল ইসলাম দাবি করেছেন, ডোল ইন্টারন্যাশনাল কোনো এনজিও নয়; এটি একটি সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান। ব্যাখ্যায় সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও এই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যানার, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণ এখনও রোহিঙ্গা শিবিরে দৃশ্যমান। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রোহিঙ্গা শিবিরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই আমার ক্ষতি করে আপনার কি লাভ’ বলে ফোন কেটে দেন সাইদ।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডোল ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্প ইনচার্জদের তাদের সম্পর্কে এলার্ট করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও করা হচ্ছে। ক্যাম্পে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।