কেঁচো সারে স্বাবলম্বী শতাধিক নারী

গাজীপুর, দেশের খবর

ফয়সাল আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 14:24:37

গাজীপুর শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে সবুজে মোড়ানো পথ মাড়িয়ে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে পাজুলিয়া গ্রাম। সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এই গ্রামে ঢুকলেই নারীদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে।

শহুরে সভ্যতার ছোঁয়া এখনও না লাগায় দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামের সিংহভাগ পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে গ্রামটির বিশেষত্ব হচ্ছে পুরুষরা মাঠে কাজ করলেও গৃহিণীরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই।

নারীরা নিজেদের প্রচেষ্টায় বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির শেড। আর এটা নিয়েই নারীদের ব্যস্ততা। কারণ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপনণে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এক সময়ের নিত্য অভাবকে জয় করে এখন তারা স্বাবলম্বী।

ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে সফল একজন গৃহবধূ মোমেনা খাতুন জানান, এক যুগ আগে তার শাশুড়ি এই সার তৈরি শুরু করেছিলেন। এখন এই সার তৈরি ও বিপনণ তিনিই পরিচালনা করছেন।

বর্তমানে তার শেডে প্রায় ৩৪টি সিমেন্টের তৈরি গামলা রয়েছে। প্রতিমাসেই তার এই শেড থেকে  ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। শুধু তিনিই নন, এই গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতেই রয়েছে এই সার তৈরির শেড, যেগুলোর মূল উদ্যোক্তা গৃহবধূরা।

মোমেনা জানান, গাঁয়ের শতাধিক পরিবারে এই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপনণ হলেও এর মধ্য থেকে ২৭ জন নারী উদ্যোক্তা মিলে ইতোমধ্যে পাজুলিয়া জৈব সার উৎপাদনকারী মহিলা সমবায় সমিতি গড়ে তোলেছেন। তিনি নিজেই এই সমিতির সভানেত্রী।

এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে সহযোগিতা না পাওয়ায় পুঁজি গঠনে প্রতিজন মাসে ২০০টাকা করে স্থানীয় কৃষি ব্যাংকে সঞ্চয় করেন। তাদের দেখাদেখি এখন অন্য গ্রামের গৃহবধূরাও এই সার তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়াতে পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

সেলিনা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের গৃহবধূদের কেঁচো সার তৈরির প্রাথমিক ধারণা দেন স্থানীয় বাসা নামের একটি এনজিও। তারাই প্রথম প্রশিক্ষণ ও বিদেশি কেঁচো সরবরাহ করেছিলেন। এখন সারের পাশাপাশি প্রতিমাসে এক হাজার টাকা কেজি দরে কেঁচোও বিক্রি করি।’

আরেক গৃহবধূ জাহানারার ভাষ্য, ‘সংসারের যাবতীয় কাজের পাশাপাশি এই কাজ করা যায়। এতে তেমন সময় ব্যয় হয় না। এ কাজ থেকে বিনা ঝামেলায় অতিরিক্ত আয় হয়, পাশাপাশি নিজেদের জমিতেও ব্যবহার করছি এ সার।’

জানা যায়, এ গ্রামের নারীদের উৎপাদিত ভার্মি কমপোস্টের প্রধান ভোক্তা গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। সেখানকার বিজ্ঞানীরা গবেষণা মাঠের ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতিমাসে কয়েক টন ভার্মি সার নগদ টাকায় কিনে নেন।

এছাড়াও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার ফার্ম, কৃষকরা এখান থেকে সার কেনেন। ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নরসিংদী, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেও সার ও কেচো নিয়ে যান গ্রাহকরা।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘উচ্ছিষ্ট, গোবর, তরকারির খোসাসহ আবর্জনা দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এগুলো ফসলের জন্য খুবই উপকারী। কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রতিনিয়ত জৈব সার উৎপাদনের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করছি। ভবিষ্যতে এর ব্যাপকতা বাড়াতে তাদের সহযোগিতার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’

তিনি বলতে, ‘আমরা যেহেতু সরাসরি কোনো আর্থিক সহযোগিতা করতে পারি না, তাই এ সার উৎপাদনের সাথে জড়িত নারীরা যদি ঋণের জন্য আবেদন করেন, তবে ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর